বাংলাভাষা প্রাথমিক অবস্থায় ছিলো আঞ্চালিক ভাষার মত। ভাষাটি বিরাট জনগোষ্ঠীর জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিলো না। এ জন্য দরকার ছিলো- বাংলাভাষার ব্যাপক চর্চা, যা ঘটে সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে, মধ্যযুগে সেই কাজটি করেছিলো মুসলিম কবি-সাহিত্যিকরা। মুসলিম সাহিত্যিকরা বাংলা ভাষায় ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে ভাষাটি সমৃদ্ধ করে। যেহেতু মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে আরবী ও ফারসীর ব্যাপক প্রভাব ছিলো, তাই বাংলা ভাষায় প্রচুর পরিমাণে আরবী ও ফারসী শব্দ প্রবেশ করে, যা বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করে একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। আসুন জেনে নেই, সে সময় কোন কোন মুসলিম সাহিত্যিক বাংলাভাষাকে চর্চা করে বাংলাভাষাকে পরিপূর্ণতা দান করেছিলেন-
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যিক
} শাহ মুহম্মদ সগীর (১৪শ’ শতাব্দী)
} জৈনুদ্দীন (১৫শ’ শতাব্দী)
} মুজাম্মিল (১৫শ’ শতাব্দী)
} দোনাগাজী: (১৬শ’ শতাব্দী)
} শেখ ফয়জুল্লাহ (১৬শ’ শতাব্দী)
} দৌলত উজির বাহরাম খান: (১৬শ’ শতাব্দী)
} মুহম্মদ কবীর (১৬শ’ শতাব্দী)
} সৈয়দ সুলতান (১৬শ’ শতাব্দী)
} শেখ পরান (১৬শ’ শতাব্দী)
} হাজী মুহাম্মদ (১৬শ’ শতাব্দী)
} মীর মুহাম্মদ শফী (১৬শ’ শতাব্দী)
} নসরুল্লাহ্ খাঁ (১৬শ’ শতাব্দী)
} মুহম্মদ খান
} সৈয়দ মর্তুজা
} শেখ মুত্তালিব
} আবদুল হাকীম
১৬০০ থেকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকজন হলেন
-নওয়াজিশ খাঁ,
-কমর আলী,
-মঙ্গল (চাঁদ),
-আবদুন নবী,
-মুহম্মদ ফসীহ,
-ফকির গরীবুল্লাহ্,
-মুহম্মদ ইয়াকুব,
-শেখ মনসুর,
-শেখ চাঁদ,
-মুহম্মদ উজীর আলী,
-শেখ সাদী,
-হেয়াত মামুদ
-দৌলত কাজী
১৭শ’ শতাব্দীতে আরকান (বর্তমানে বার্মার রাখাইন রাজ্য) রাজসভায় মহাকবি আলাওল, দৌলত কাজী, এবং কোরেশী মাগন ঠাকুর এর মতো বাংলা কবিদের সাধনা আর পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে বাংলা সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি হয়। উল্লেখ্য, বর্তমানেও চট্টগ্রামের অনেক লাইব্রেরীতে আরকান রাজসভার বাংলা সাহিত্য চর্চার দলিলগুলো রাখা আছে। যদিও আজকাল মিডিয়া বা পাঠবই বিষয়গুলো এড়িয়ে যায় বললেই চলে। দু:খজনক হলেও সত্য, বাংলাভাষা মূল গোড়া অনুসন্ধান করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি অনেক মুসলমানও না জেনে বোকার মত বলছে- বাংলাভাষা নাকি হিন্দুদের ভাষা, যদিও ভাষাটি এ অবস্থানে এসেছে মুসলমানদের হাত ধরেই।
|