মাথা ব্যথাঃ A 2 Z পরামর্শ
বাঙালির জীবনে মাথাব্যথা প্রবল সমস্যা। ১৫ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে প্রতিদিন ন্যূনতম ১০% লোক মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। অন্যান্য দেশে একই হার। মাথাব্যথা আমাদের জীবনে এত বেশি ‘কমন’ যে এর মধ্যে যারা যারা মাথাব্যথায় ভোগেন তারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না। নিজেরাই নিজের চিকিৎসা করেন। প্যারাসিটামলের কথা সবাই জানি। এ জাতীয় ওষুধের মধ্যে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, যা পৃথিবীর যে কোনো আনাচে-কানাচে ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়। আরেকটি যা প্রেসক্রিপশন ছাড়া পাওয়া যায়, এমন ওষুধ ডায়াজিপাম। জন্মকাল থেকে প্রতিটি নারী-পুরুষ সিডাক্সেন ট্যাবলেটের সাথে পরিচিত। যে কোনো বাড়িতে ন্যূনতম ২টি ওষুধ যদি থাকে তার একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও সিডাক্সেন ট্যাবলেট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যারা এ ওষুধ ব্যবহার করেন তারা মাথাব্যথার জন্যই ব্যবহার করেন। ঘুমের জন্য নয়, মাথাব্যথা কমানোর জন্য।
ডায়াজিপাম ওষুধের ব্যাপারে ১৯৮৯ সালে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের প্রায় ৫ লক্ষ মহিলা, গৃহিণী প্রতিরাতে ঘুমের ওষুধ খান। স্বভাবত আগামীতে এই পরিমাণ আরো বেশিই হবে।
সাধারণভাবে কর্মজীবী গৃহিণী ও পড়ুয়া মেয়েদের মধ্যে এই জাতীয় প্যারাসিটামল, সিডাক্সেন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা উল্লেখ করা যায়। আমরা এ দেশের জনগণ, হরহামেশা একজনের অসুখের কথা শুনলে চট করে ওষুধের কথা বলি এবং প্রায় প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের কথা বলি। সমকালীন সাহিত্যে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক এই প্যারাসিটামল বা সিডাক্সেন ট্যাবলেট তাদের বইতে প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
১. মাথাব্যথা কী?
ঘাড়ের উপরের অংশ মাথা। ঘাড়ের অংশ বাদ দিলে গোলাকার বস্তুটি মাথা। মাথায় আমরা ধরি দুটি চোখ, দুটি কান, নাক, মুখ ও দুপাটি দাঁত। এছাড়া অ্যানাটমিতে মাথায় পাওয়া যায় মাংসপেশি, হাড়, মেনিনজেস এবং শেষে মগজ। মেনিনজেস আবার ৩ ভাগে বিভক্ত : একটি ডুরা, আরেকটি অ্যারাকনয়েড ও পায়া ম্যাটার। ডুরা ম্যাটার হাড়ের ভেতরের অংশে লেগে থাকে। অ্যারাকনয়েড ম্যাটার ডুরা এবং পায়া ম্যাটারের মধ্যে থাকে। ডুরা এবং অ্যারাকনয়েড ম্যাটারের মধ্যে ফাঁকা জায়গা আছে। অ্যারাকনয়েড এবং পায়া ম্যাটারের মধ্যেও ফাঁকা জায়গা আছে। ফাঁকা জায়গাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের তরল পদার্থ আছে-যাতে করে ভেতরে মগজের অংশে নড়াচড়ায় কোনোরূপ ব্যাঘাত না হয় বা বাইরের চাপে মূল অংশের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। মগজকে আবার সেরিব্রাল হেমিস্কেয়ার বা সেরিব্রাল করটেক্স ও সেরিবেলাম নামে ভাগ করা হয়েছে। কর্টেক্সে বিভিন্ন রকম মেডিকেল ভাগ আছে। কর্টেক্স থেকে স্নায়ুতন্ত্র উৎপত্তি হয়। সেখান থেকে নিউরোনের ফাইবার ধরে অনেক কোটি কোটি স্নায়ুতন্ত্র মিলে হয় স্পাইনাল কর্ড। কর্ডের কাজ হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে সংবেদনশীল অনুভূতি মাথায় পৌঁছে দেয়া আর মাথায় বা মগজে যে প্রতিক্রিয়া হয় তা বিভিন্ন অঙ্গে পৌঁছে দেয়া। একে বলে রিফ্লেক্স। মাথা কাজ করে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মতো।
তাই মাথাব্যথা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বুঝতে হবে। মাথাব্যথা বলতে মাথার বিভিন্ন অংশ থেকে যে ব্যথা হয় তাকে মাথাব্যথা বলে। আমরা বেশির ভাগ মাথার পেশির ব্যথার কথা বলি।
২. মাথাব্যথা কত রকমের?
অনেক ধরনের মাথাব্যথার কথা আমরা জানি। তার মধ্যে টেনশন টাইপ ও মাইগ্রেন টাইপের ব্যথা সবচেয়ে বেশি। এদের চিকিৎসাও ভিন্নতর।
টেনশন টাইপ ব্যথা
উপসর্গঃ ভারী ভারী একটানা এক ধরনের ব্যথা মাথার দুদিকে থাকে। মৃদু থেকে বেশি মাত্রায় হয়। মাথা দু হাত দিয়ে চেপে ধরেছে মনে হয়। মাথার চারদিকে একটি ব্যান্ড বেঁধে দিয়েছে বলে অনুভূত হয়। ব্যথা ঘাড় কিংবা কাঁধে চলে যায়।
সময়ঃ ১-২ ঘণ্টা থাকে। বেশিও থাকে। বিকেলের দিকে বা সন্ধ্যায় বেশি হয়। সারাদিনের পরিশ্রম ও মানসিক চাপের পরে যারা দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টেনশন হেডেকে ভোগেন তাদের মাথাব্যথা প্রত্যেক দিন হয়।
কারণঃ আবেগজনিত চাপ বড় কারণ। তবে কিছু কিছু শারীরিক রোগেও হয়ে থাকে যেমন- আর্থ্রাইটিস।
চিকিৎসাঃ ওটিসি ড্রাগ দ্বারা বা টোটকা চিকিৎসা করা হয়। বিশ্রাম, মাথায় বরফ বা মানসিক চাপ মোকাবেলা ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে টেনশন হেডেক সারানো যায়। যদি এই ব্যথা প্রতিদিন হয় তাহলে চিকিৎসক দেখাবেন।
মাইগ্রেন টাইপ ব্যথা
মাথাব্যথা মাঝারি থেকে বেশি মাত্রায় হয়। মাথাব্যথার ধরন-যেন হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। মাথার একদিকে ব্যথা হয়। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, কেমন কেমন লাগা, আলো বা শব্দে বিরক্তি উপসর্গ থাকতে পারে। ১৫% রোগী পূর্বেই বুঝতে পারেন মাথাব্যথা হবে।
বোঝার উপসর্গঃ চোখে আলো ঝলমলভাব পাওয়া যায়। মোট রোগীদের মধ্যে ৭০% মহিলা।
সময়ঃ ৩ ঘণ্টা থেকে ৩ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসঃ প্রায় ১-২ ঘণ্টা পূর্বে হয়।
মাঝে মাঝে হয়। সপ্তাহের প্রতিদিনও হয়। গড়ে ১-৩ বার প্রতিমাসে হয়।
কারণঃ নানা বিশেষজ্ঞ নানা কারণ বলেন। জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াই আসল কারণ। বংশানুক্রমিকও হয়। ৯০% ক্ষেত্রে বংশে মাথাব্যথার ইতিহাস থাকে।
কী কী জিনিসে হয়ঃ খাদ্যবস্তু, মদ বা পানীয়, মাসিক হওয়া, ক্যাফিন জাতীয় পদার্থ, আবহাওয়ার পরিবর্তন, ঘুমের অসুবিধা, মানসিক চাপ, ধূমপান, গরম, শব্দ ইত্যাদি কারণ হতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি, হরমোন এই ব্যথা বাড়াতে পারে।
চিকিৎসাঃ যেসব কারণে হয় তা থেকে সরে থাকা, মানসিক চাপ মোকাবিলা প্রধান চিকিৎসা, বিশ্রাম, বরফ ইত্যাদি সাহায্যকারী। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ অনেক দিন খেতে হয়।
মাথাব্যথার অন্যান্য ধরন
ক্লাস্টার হেডেক সাধারণভাবে কম পাওয়া যায়। অত্যন্ত ব্যথা হয়, মনে হয় চাকু দিয়ে একটা চোখ কেটে ফেলছে। অনেক দিন থাকে না। ২০-৩০ বছর বয়সে বেশি হয়। যাদের হয় তাদের মধ্যে ৯০% পুরুষ।
৩. কিছুক্ষণ একনাগাড়ে পড়লে মাথাব্যথা করে, কী করব?
চোখের কাজের চাপ থাকলে তাতে মাথাব্যথা করতে পারে। তবে কম আলোতে লেখাপড়া করলে বা অনেক সময় ধরে একটানা পড়লে মাথাব্যথা হতে পারে। আসলে চোখে তো ব্যথা হয় না, ব্যথা হয় চোখের পাশের ছোট ছোট মাংসপেশিগুলোতে। ওই মাংসপেশিগুলো আমাদের চোখ নড়াচড়ায় সাহায্য করে। চোখের মণি ছোট-বড় করতে সাহায্য করে। চোখের চাপ কমানোর জন্য উপযুক্ত আলোতে পড়াশোনা করুন। প্রতি ঘণ্টায় পড়ায় ৫ মিনিট বিশ্রাম নিন। মাঝে মাঝে রুমে এদিক-ওদিক তাকান। কাছে তাকান, দূরে তাকান। চোখের চাপে মাথাব্যথা শুরু হলে রুমের আলো ডিম করে দিন বা কম আলোকিত ঘরে যান, দুচোখের উপর দুহাত দিয়ে ঢাকুন। ঢাকা অবস্থায় চোখ খুলুন-এ রকম ৩০ সেকেন্ড রাখুন। চোখ বন্ধ করুন, হাত দুটো নামান, এবার আস্তে আস্তে চোখ খুলুন। এভাবে কয়েকবার করলে চোখজনিত মাথাব্যথা কমে যাবে।
৪. মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আমার মন
অস্থির লাগে। আমার কী ইনসমনিয়া হয়েছে?
হতে পারে। ইনসমনিয়া, ঘুম আসতে কষ্ট হওয়া ও ঘুম ভেঙে যাওয়া বা ভেঙে গিয়ে আর ঘুম না আসা বা ভেঙে ভেঙে ঘুম হওয়াকে বোঝায়। যারা স্বাভাবিক ঘুমান তাদের ঘুম রাতে ৫-১৫ বার ভেঙে যায়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য আবার তারা ঘুমান, কিন্তু ঘুম ভাঙার কথা তারা মনে করতে পারেন না। শতকরা ৫০ ভাগ অনিদ্রারোগ বিবাহজনিত মানসিক চাপ, চাকরির চাপ, দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন রোগে হয়ে থাকে। আপনার মনে কোনো না কোনো বিষয়ে দুশ্চিন্তা খেলা করছে। আপনি ওইগুলো নির্ণয় করার চেষ্টা করুন ও সমাধানের চেষ্টা করুন। আপনার ঘুমের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
৫. ঘূর্ণিঝড় বা ঝড়-বাদলের আভাস পেলে
আমার মাথাব্যথা করে, কেন তা হয়?
হ্যাঁ তা হতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তন, সাধারণভাবে ভালো থেকে খারাপ আবহাওয়ায় গেলে মাথাব্যথা হতে পারে। ওই মাথাব্যথা মাইগ্রেন বা অন্য কোনো ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে। ঝড়ে বাতাসের যে চাপের পরিবর্তন হয় তাতে মাইগ্রেন বা অন্য কোনো মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।
৬. মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া কী?
ওই চাপ সাহায্যকারী না খারাপ?
শরীর ও মন যখন খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় তখনই অবচেতনভাবে চাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এটা সাহায্যকারী হতে পারে বা খারাপ হতে পারে। উদাহরণ-চাপের একটি প্রতিক্রিয়ায় মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া। ধরুন এক জায়গায় হাড় ভেঙে গেল, শরীর ওই ভাঙা জায়গার মাংসপেশিগুলো অবচেতনভাবেই শক্ত করে ফেলে, যাতে করে আর না ভাঙে। কিছু আবেগজনিত প্রক্রিয়ায় টেনশনের সময়, অনেক ব্যক্তি দাঁতে দাঁত লাগিয়ে থাকেন। ওই কারণে মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। এর পর যখন আপনি টেনশনে পড়বেন তখন আপনার ছবি দেখুন। যদি দেখেন ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে গেছে, দাঁতে দাঁতে লেগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে বা দেখতে রাগী রাগী লাগছে তাহলে বুঝতে হবে আপনার মাথাব্যথা হয় ক্রোধ ও রাগের জন্য।
৭. যে সমস্যায় আমার বন্ধুরা টেনশনে ভোগেন না, অথচ আমি টেনশনে পড়ি ও মাথাব্যথা শুরু হয়। কেন?
কিছু কিছু ব্যক্তি আছেন-যাদের রাগ ও টেনশনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। আপনি যাতে মানসিক চাপ বেশি সহ্য করতে পারেন তার কতগুলো পদ্ধতি আছে। আপনি সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। হালকা ব্যায়াম করুন, পরিমিত ঘুমান এবং আপনার ওজন সীমাবদ্ধ রাখুন। সিগারেট ও মদ খাবার মতো বাজে অভ্যাসগুলো ত্যাগ করুন। আপনার আবেগগুলো প্রকাশ করার জন্য মনের কথা কাউকে খুলে বলুন। দিনের কিছু সময় নীরব জায়গায় কাটানোর চেষ্টা করুন। দেখবেন পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।
৮. আমি রাতে ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমাই এবং ভালো আছি। আমি শুনি ৮ ঘণ্টা ঘুম নাকি শরীরের জন্য প্রয়োজন?
রাতে কতক্ষণ ঘুমাবেন তা এক ব্যক্তি থেকে আর ব্যক্তিতে কমবেশি হয়। সুখনিদ্রা ৩ ঘণ্টা থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। নির্ভর করে আপনার শরীর কী চায়। কেউ কেউ ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে ভালো থাকেন। কতটুকু ঘুমানোর প্রয়োজন তা বের করতে বন্ধের সময় পরপর তিন দিনের পর্যাপ্ত ঘুমকে গড় করে বের করুন। তাই হবে নির্দিষ্ট মাত্রা।
৯. আমার স্বামী ধূমপান করেন আর মাথাব্যথায় ভোগেন। দুটিতে কোনো সম্পর্ক আছে কি?
হ্যাঁ, সম্পর্ক আছে। সিগারেট ও মাথাব্যথার মধ্যে সম্পর্ক আজ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। সিগারেটে নিকোটিনের পরিমাণ যত বেশি হয় মাথাব্যথার মাত্রা তত বেশি হবে। আপনার স্বামীর মাথাব্যথার কারণ ধূমপান। ধূমপান ছেড়ে দিলে মাথাব্যথা কমে যাবে। তবুও সাইকোলজিক্যাল কোনো কারণ আছে কি না তা নির্ণয় করার জন্য মনোচিকিৎসকের সাহায্য নেবেন।
১০. আমার ১২ বছরের ছেলেটি মাথাব্যথায় ভোগে। ওদের মানসিক চাপের জন্য মাথাব্যথা হয় কি?
সাধারণভাবে শতকরা ৭০ জন মেয়ে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে মাথাব্যথায় ভোগে। মানসিক চাপ এদের প্রধান কারণ। কৈশোরকালে বন্ধু-বান্ধবের সাথে মানসিক চাপ, শরীর পরিবর্তনের মানসিক চাপ, পিতা-মাতার সাথে মানসিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি মাথাব্যথা শুরু হতে সাহায্য করে। কৈশোর বয়সে খাবারের অভ্যাসের ঠিক না থাকা, ঘুমের অভ্যাসের ঠিক না থাকা মাথাব্যথা বাড়িয়ে দেয়। মেয়েদের মধ্যে মাসিক শুরু হওয়ার সময়টিতে মাথাব্যথা হতে পারে। বাচ্চাদের এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ওদের খেলাধুলায় উৎসাহ দিন, শ্লথন প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিন, আদর দিন।
১১. কিছু কিছু লোকের টেনশন কেটে গেলে মাথাব্যথা হয় কেন?
জীবনের প্রতি মুহূর্তে আমরা টেনশনের মুখোমুখি হই। চাকরি, বয়স, ফ্যামিলি, অর্থ, সেক্স, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ইত্যাদি কারণে স্ট্রেস হতে পারে। মানসিক চাপ চলে গেলে রিলাক্সড লাগে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যক্তির ওই রিলাক্সড সময়ে মাথাব্যথা হয়। তাদের মাথাব্যথা কিন্তু সাইকোলজিক্যাল কারণে হয় না। হয় শারীরিক কারণে। কারণ যখন তিনি টেনশনে থাকেন তখন তার রক্তনালিগুলো চাপা থাকে। টেনশন চলে গেলে রক্তনালিগুলো ঢিলা হয়ে যায়। তখন মাথাব্যথা হয়। এ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য দরকার স্ট্রেসের পরিমাণ কমানো এবং বিশ্রাম সময়ে কাজে ব্যস্ত থাকা।
১২. ক্যাফিন খেলে কি মাথাব্যথা কমে যায়?
হ্যাঁ, ক্যাফিন বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে মাথাব্যথা নিরাময়ে ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তবে ক্যাফিনের সবচেয়ে বড় অসুবিধা যে এটি নির্ভরশীলতা বা মাদকাসক্তির সৃষ্টি করে। আমাদের যুবসমাজ আজ ফেনসিডিল নামক কফ সিরাপে মাদকাসক্ত। উল্লেখ্য যে, ওই ফেনসিডিলে ক্যাফিন নামক পদার্থটি আছে এবং ওই পদার্থের জন্যই তাদের মাদকাসক্তি ঘটে থাকে।
১৩. মাথাব্যথা হলে কখন
ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
প্রতিবার মাথাব্যথায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। শতকরা ৯০ ভাগ মাথাব্যথা মারাত্মক কোনো ব্যাপার নয়। সাধারণ ওটিসি ওষুধ প্যারাসিটাল খেলেই তা চলে যায়। যদি তাতেও না কমে একটু বিশ্রাম, ঠান্ডা বরফ, শিথিলায়ন প্রক্রিয়ায় তা কমে যাবে। কিন্তু কিছু কিছু উপসর্গ আছে যখন মাথাব্যথা সিরিয়াস রোগ মনে হবে তখনই ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার।
যখন মাথাব্যথা আপনার জীবনের গুণগত মানকে কমিয়ে দেবে বা ফ্যামিলির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বাধা দেবে, আপনার কাজের ক্ষমতা বা পড়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেবে বা জীবনকে অনুভব করতে বাধা দেবে। সাধারণভাবে মাথাব্যথার ওষুধ, কিছু রিলাক্সেশন প্রক্রিয়া মাথাব্যথার মাত্রা কমিয়ে দেবে। কিন্তু একেবারে সারিয়ে তুলবে না, তখনই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
নিচের যে কোনো একটি উপসর্গ থাকলে মাথাব্যথার জন্য ডাক্তারের সাথে দেখা করুন
যদি মাথাব্যথা সপ্তাহে তিনবারের বেশি হয়।
ব্যথা যদি হঠাৎ করে ওঠে, বেশি মাত্রায় উঠে, বিশেষ করে ব্যথা হওয়ার আগে আপনি যখন স্বাভাবিক ছিলেন।
যদি সবচেয়ে খারাপ মাথাব্যথা মনে হয়।
ঘাড় বা মাথায় আঘাতের পর মাথাব্যথা হলে।
পঞ্চাশ বছর বয়সের পরে মাথাব্যথা হলে।
মাথাব্যথার পাশাপাশি চোখে ঝাপসা দেখা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, অসাড়তা, শরীরের যে কোনো জায়গায় বা হাত-পায়ে দুর্বলতা অনুভব করলে।
মাথাব্যথার সাথে ‘ঘোর লাগা’ বা ঘুম ঘুম লাগলে।
মাথাব্যথার সাথে যদি জ্বর, বমি বমি ভাব, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, বমি অথবা নাক-কান-গলা, চোখে নানা প্রকার উপসর্গ দেখা দিলে।
মাথাব্যথা যদি ব্যায়াম, কাশি, হাঁচি বা শরীর বাঁকা করলে হয়।
১৪. টোটকা ওষুধে কোনো উন্নতি না হলে
ডাক্তার দেখাব কি?
যখন সাধারণ টোটকা ওষুধে কোনো উন্নতি হচ্ছে না তখন ডাক্তার দেখানোই ভালো। তবে-
(ক) সাধারণ মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে মাথাব্যথা দমানো গেলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
(খ) আপনার মাইগ্রেন মাথাব্যথা থাকতে পারে। সাধারণ ওষুধের পাশাপাশি ডাক্তারের ওষুধ নেয়ার প্রয়োজন পড়বে তখন। তা ছাড়া শক্ত ধরনের মাথাব্যথায় বিভিন্ন শারীরিক বড় অসুখ থাকতে পারে।
(গ) আবেগজনিত সমস্যা, রাগ, ক্রোধ এসব কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে, তার জন্য দরকার মনোচিকিৎসা।
১৫. মাথাব্যথায় কাজের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়?
পূর্বে এর চিকিৎসা ছিল কি?
প্রতি ৭ জনে ১ জন ব্যক্তির মাথাব্যথার কারণে প্রতিদিনকার কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। এ তো গেল বাংলাদেশের কথা। ১৫ কোটি লোকের এদেশে কাজের ক্ষতির পরিমাণ সহজেই বের করা যায়। তবে আমাদের মহিলা সমাজ যে ধরনের কাজ করেন পুরুষশাসিত এ সমাজে তার কোনো হিসাব ধরা হয় না।
একটা সময় ছিল যখন ধারণা করা হতো মাথাব্যথা একটি দুষ্টশক্তি বা মাথায় খারাপ তরল পদার্থ জমলে হয়, এ জন্য মাথায় ফুটো করে পূর্বে মাথাব্যথার চিকিৎসা করা হতো। পরবর্তী ১০ হাজার বছরে চিকিৎসার অনেক উন্নতি হয়েছে।
১৬. মাথাব্যথার জন্য কী কী জিনিস
জানা জরুরি?
মাথাব্যথার জন্য কতগুলো জিনিস নোটবুকে টুকে রাখুন। যেমন-
কী ধরনের মাথাব্যথা হয়।
কী কী কারণে মাথাব্যথা হয়।
ব্যথা কম হওয়া বা বন্ধ করার জন্য আপনি কী কী পদক্ষেপ নেন।
সাধারণ ওষুধে কতটা মাথাব্যথা কমে।
মাথাব্যথার জন্য একটি ডাইরি বুক রাখবেন।
১৭. মাইগ্রেন মাথাব্যথা কাকে বলে?
এটি এক ধরনের মাথাব্যথা। ১০% লোক এই রোগে ভোগেন। সাধারণ বয়স ২৫-৫৫ বছর। মেয়েদের বেলায় দুই গুণ বেশি হয়। অকারণে এই ব্যথা হয়। বারবার এই ব্যথা হয়, ৪-৭২ ঘণ্টা স্থায়ী থা