ড্রাম সিডার
ড্রাম সিডারের সাহায্যে ধান চাষ
@সাধারণ তথ্য@
এটি প্লাস্টিকের তৈরি ছয়টি ড্রাম বিশিষ্ট বীজ বপন যন্ত্র। ড্রামগুলো ২.৩ মিটার প্রশস্ত লোহার দন্ডে পরপর সাজানো থাকে। লোহার দন্ডের দুপ্রান্তে প্লাস্টিকের তৈরি দুটি চাকা এবং যন্ত্রটি টানার জন্য একটি হাতল যুক্ত থকে। প্রতিটি ড্রামের দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ৫৫ সেন্টিমিটার এবং এর দু’প্রান্তে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুসারি ছিদ্র আছে। প্রয়োজনে রাবারের তৈরি সংযুক্ত বেল্টের সাহায্যে এক সারি ছিদ্র বন্ধ রাখা যায়। ব্রি ২০০৩ সালে বাংলাদেশে ড্রামসিডার প্রবর্তন করে।
@ব্যবহারের সুবিধা@
১। বাংলাদেশে আবাদি জমির পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, যা বছরে প্রায় শতকরা এক ভাগ। এ অবস্থায় সীমিত জমিতে বাড়তি ফসলের জন্য হেক্টর প্রতি ফলন বাড়াতে হবে।
২। অকৃষি ক্ষেত্রে শ্রম বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধির ফলে কৃষিকাজের জন্য শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সনাতন পদ্ধতির ধান চাষ ব্যয়বহুল ও অলাভজনক হয়ে পড়ছে। ড্রাম সিডার যন্ত্রের সাহায্যে কাদা মাটিতে সরাসরি অঙ্কুরিত বীজ বপন একটি শ্রম-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ধান চাষাবাদকে লাভজনক করা যেতে পারে।
৩। অধিকন্তু এ পদ্ধতিতে প্রচলিত রোপণের তুলনায় ধানের জীবনকাল প্রায় ১০-২০ দিন কমে যায় এবং ফলন প্রায় ১০-২০% বেশি হয়।
৪। ড্রাম সিডার দিয়ে বপন কৃষকের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত একটি পদ্ধতি। কারণ এর ফলে কৃষককে কাদা-পানির মধ্যে কোমর বাঁকা করে অনেক সময় ধরে চারা রোপণ করতে হয় না।
@ড্রামসিডার ব্যবহার পদ্ধতি@
@জমি তৈরি@
জমিকে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমির আগাছা এবং অন্যান্য আবর্জনা মাটিতে পচিয়ে নিতে হবে। নিচু বিল এলাকায় নভেম্বর মাসে পানি নেমে যাবার পর আর্বজনা ও খড়কুটো সরিয়ে এবং মই দিয়ে বিনা চাষেও সরাসরি বীজ বপন করা যায়। এতেও ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। জমিকে ভালোভাবে সমতল করতে হবে। জমিতে অঙ্কুরিত বীজ বপনের সময় কোনো দাঁড়ানো পানি রাখা যাবে না।
@বীজ প্রস্তুত করা ও বোপনের সময়@
ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে এবং ভালো অঙ্কুর গজানোর জন্য প্রথমে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ডুবিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং পরে প্রয়োজন অনুযায়ী জাগ দিতে হবে। বোরো মৌসুমে নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে বীজ বপন করতে হবে। আমন মৌসুমে পানি নিস্কাশনের সুযোগ আছে এমন মাঝারি উঁচু জমিতে জুনের শেষার্ধ থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে বীজ বোনা যায়। তবে বীজ বপনের অন্তত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই এমন সময় বেছে নিতে হবে।
@ড্রামে বীজ ভর্তি ও বপন@
ড্রামের দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্কুরিত বীজ দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। ড্রামে ভর্তি করার পূর্বে অঙ্কুরিত বীজ ছায়াযুক্ত স্থানে প্রায় ২ ঘণ্টা শুকিয়ে নিতে হবে। এতে ড্রামের ছিদ্র দিয়ে বীজগুলো সমহারে পড়বে। ছয়টি ড্রামে বীজ ভরে ড্রামসিডার যন্ত্রটি দিয়ে একসঙ্গে ১২ লাইনে বীজ বপন করা যায়। অঙ্কুর খুব ছোট হলে অতিরিক্ত বীজ পড়ে যাবে, আবার অঙ্কুর বেশী লম্বা হলে ড্রামের ছিদ্র দিয়ে পড়বে না। সাধারণত অঙ্কুরের দৈর্ঘ্য ৪-৫ মিলিমিটার, অর্থাৎ একটি ধানের সমান লম্বা হলেই ভাল হয়। বোনার সময় হাতলের সাথে ২-৩ ফুট লম্বা চিকন এক খন্ড কলা গাছ হালকা মই হিসেবে বেঁধে নিলে জমিতে পায়ের দাগ বা গর্ত মুছে যাবে এবং কিছুটা বীজের অপচয়ও রোধ হবে।
অঙ্কুরিত বীজ ড্রামে ভরার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ড্রামের এক তৃতীয়াংশ অবশ্যই খালি থাকে। ড্রামের গায়ে আঁকা ত্রিভূজাকৃতি চিহ্ন যেন সবসময় সামনের দিকে থাকে। সাধারণত একক ঘন সারিতে বীজ বপন করা উত্তম এবং এতে বিঘাপ্রতি ৩.৫-৪.০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
@পানি ও সার ব্যবহার@
বপনের প্রাথমিক অবস্থায় মাটিতে দাঁড়ানো পানির প্রয়োজন নেই। মাটি রসাল অবস্থায় রাখতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে চারার বৃদ্ধির সঙ্গে সেচের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
অনুমোদিত মাত্রায় সার ব্যবহার করতে হবে। নাইট্রোজেন সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে এলসিসি ব্যবহার করা যেতে পারে। সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার ফসল, মাটি এবং পরিবেশের জন্য ভাল। এজন্য প্রথমে জানতে হবে কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ভিত্তিক মাটির উর্বরতা শ্রেণী এবং জেনে নিতে হবে জমি কোন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সে অনুযায়ী মৌসুম-ভিত্তিক সারের সুষম মাত্রার সার প্রয়োগ করতে হবে। ফসফেট, পটাশ, জিপসাম ও দস্তা সারের প্রভাব পরবর্তী ফসল পর্যন্ত থাকে। এ জন্য রবি ফসলে ফসফেট, পটাশ ও জিপসাম সার অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করলে দ্বিতীয় ফসলে উল্লিখিত সারগুলোরে মাত্রা অর্ধেক পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে। দস্তা সার একবার প্রয়োগ করলে তা পরের তিন ফসলে প্রয়োগ করতে হবে না।
ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা জমিতে কম সময় থাকে তাই এ সার কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। ১ম কিস্তি জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে, ২য় কিস্তি ধানের গোছায় ৪-৫ টি কুশি অবস্থায় ও ৩য় কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫-৭ পূর্বে দিতে হবে। যে সব জাতের জীবণকাল ১৫০ দিনের বেশি সেক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় ইউরিয়া প্রথম কিস্তি এবং পরে সমান তিন কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া উপরি-প্রয়োগের সময় মাটিতে অবশ্যই প্রচুর রস থাকতে হবে। সবচাইতে ভাল হয় যদি ক্ষেতে ২-৩ সেন্টিমিটার পানি থাকে। ইউরিয়া প্রয়োগের সাথে সাথে হাতে বা উইডার দিয়ে আগাছা পরিস্কার করা দরকার। ইউরিয়া সার প্রয়োগের পরেও ধানগাছ যদি হলদে থাকে এবং বাড়বাড়তি কম হয় তাহলে গন্ধকের অভাব হয়েছে ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। এরপর হেক্টরপ্রতি ৬০ কেজি বা বিঘাপ্রতি ৮ কেজি জিপসাম সার উপরি-প্রয়োগ করলে ফল পাওয়া যাবে।
যদি ধানগাছ মাঝেমধ্যে খাটো হয়ে বসে যায় এবং পুরাতন পাতায় মরচে পড়া বাদামী থেকে কমলা রঙ ধারণ করে এবং ধানের কুশি কম থাকে তখন ধরে নিতে হবে দস্তার অভাব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে। এরপর হেক্টরপ্রতি ১০ কেজি বা বিঘাপ্রতি ১ কেজি ৩৫০ গ্রাম দস্তা সার উপরি-প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় হেক্টরপ্রতি ২.৫-৩.০ কেজি জিংক সালফেট ১২৫-১৫০ গ্যালন পরিস্কার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে দু’কিস্তিতে যথাক্রমে রোপণের ১০-১৫ ও ৩০-৩৫ দিন পর ধানগাছের পাতার উপর ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এভাবে মূল্যবান দস্তা সারের অপচয় রোধ করা সম্ভব।
@সতর্কতা@
১। বপনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারী বৃষ্টি হলে বীজ এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।
২। জমি অসমতল হলে কিংবা ক্ষেতে পানি জমে থাকলে অঙ্কুর পচে যেতে পারে।
৩। যথাযথ অঙ্কুরোদ্গম না হলে বীজ বেশি লাগে এবং চারা সমভাবে গজায় না।
৪। যে জমিতে বেশি আগাছা জন্মায় সেখানে আগাছা নাশক ব্যবহার করা জরুরি।
৫। বপনের পরে প্রথম ৭ দিন পাখি ও হাঁস-মুরগির উপদ্রব হতে পারে।
৬। আমন মৌসুমে জমি তৈরির দিন এবং বোরো মৌসুমে পরের দিন বীজ বপন করা উত্তম। আমন মৌসুমে মাঝারি উঁচু জমিতে বৃষ্টি এড়িয়ে বীজ ফেলতে হবে।
@ড্রাম সিডার দিয়ে বোনা ধানে আগাছা দমন@
@ভূমিকা@
বাংলাদেশে ড্রামসিডার দিয়ে সরাসরি ধান বপন পদ্ধতি দ্রূত জনপ্রিয় হচ্ছে। আমদানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন-রে ড্রামসিডার তৈরিও হচ্ছে। আগাছা দমনই ড্রামসিডার পদ্ধতির অন্যতম প্রধান সমস্যা। বোনা ধানের আগাছা সমস্যা সাধারণত এলাকাকেন্দ্রিক একটি সমস্যা। সব অঞ্চলে এবং সব জমিতে আগাছার উপদ্রব একই মাত্রার নয়। ধানের ফলন বাড়াতে এবং ভবিষ্যৎ আগাছার বংশবৃদ্ধি রোধকল্পে আগাছা দমন করতে হবে।
@দমন পদ্ধতি@
আগাছা দমন পদ্ধতি প্রধানত দুই রকমঃ
(ক) পরোক্ষ পদ্ধতি
(খ) প্রত্যক্ষ পদ্ধতি
(ক) পরোক্ষ পদ্ধতি
উন্নত মানের বীজ ব্যবহারঃ
বীজ অবশ্যই মিশ্রণমুক্ত (অন্য জাত এবং আগাছা বীজ থেকে) হওয়া চাই। আগাছাযুক্ত বীজ ব্যবহার আগাছার প্রার্দুভাবের অন্যতম কারণ।
জমি বাছাই ও উত্তম রূপে জমি প্রস্তুত করাঃ সাধারণত আগাছা কম জন্মায় এমন জমি বাছাই করতে হবে। উত্তমরূপে জমি তৈরি করা আগাছা দমনের প্রধান উপায়। সময়মতো চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পচিয়ে নিতে হবে। ড্রামসিডার দিয়ে চাষের জন্য আগাছামুক্ত জমি নির্বাচন করা দরকার। সব জমিতেই আগাছা সমানভাবে জন্মায় না। সাধারণত একফসলি নিচু জমিতে আগাছা কম হয়।
যথাযথভাবে বীজ বপন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে চারা উৎপাদনঃ ঘন ধানের জমিতে আগাছা কম হয়। ফাঁকা জায়গা চারা দিয়ে ভরে দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
ড্রাম সিডার দিয়ে কাদাময় জমিতে বীজ বোনার পর কিছুদিন পানি দেয়া হয় না বিধায় সাধারণত আগাছা বেশি হয়। তবে চারা বড় হওয়ার পর ৫-৭ সেন্টিমিটার দাঁড়ানো পানি রাখা চাই।
বীজ অবশ্যই মিশ্রণমুক্ত (অন্য জাত এবং আগাছা বীজ থেকে) হওয়া চাই। আগাছাযুক্ত বীজ ব্যবহার আগাছার প্রার্দুভাবের অন্যতম কারণ। সাধারণত আগাছা কম জন্মায় এমন জমি বাছাই করতে হবে। উত্তমরূপে জমি তৈরি করা আগাছা দমনের প্রধান উপায়। সময়মতো চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পচিয়ে নিতে হবে। ঘন ধানের জমিতে আগাছা কম হয়। ফাঁকা জায়গা চারা দিয়ে ভরে দিতে হবে। ড্রাম সিডার দিয়ে কাদাময় জমিতে বীজ বোনার পর কিছুদিন পানি দেয়া হয় না বিধায় সাধারণত আগাছা বেশি হয়। তবে চারা বড় হওয়ার পর ৫-৭ সেন্টিমিটার দাঁড়ানো পানি রাখা চাই। ড্রামসিডার দিয়ে চাষের জন্য আগাছামুক্ত জমি নির্বাচন করা দরকার। সব জমিতেই আগাছা সমানভাবে জন্মায় না। সাধারণত একফসলি নিচু জমিতে আগাছা কম হয়।
(খ) প্রত্যক্ষ পদ্ধতি
হাতে নিড়ানিঃ এ পদ্ধতি সর্বাধিক কার্যকর কিন্তু অদক্ষ এবং ব্যয়বহুল পন্থা। ২-৩ টি নিড়ানি যথেষ্ট।
যান্ত্রিক পদ্ধতিঃ ব্রি উইডার দিয়ে আগাছা দমন। ব্রি উইডার ড্রাম সিডারের সঙ্গে সমন্বিত করা হয়েছে (১২ সেন্টিমিটার প্রস্থ)।
আগাছানাশক ব্যবহারঃ
১) ধান চাষে আগাছা নাশকের ( herbicides) ব্যবহার বাড়ছে।
২) সতর্কতার সঙ্গে আগাছানাশক ব্যবহার করতে হবে।
৩) ২০-২৫ মিলিলিটার রনস্টার বা ১০-১২ রিফিট (১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) প্রতি ৫ শতক জমিতে প্রয়োগযোগ্য।
৪) বোরো মৌসুমে বপনের ৭-১০ দিনের মধ্যে জমিতে ছিপছিপে দাঁড়ানো পানি থাকা অবস্থায় প্রয়োগ করতে হয় এবং এর পরও ৪-৫ দিন ছিপছিপে পানি রাখতে হবে।
৫) আউশ ও আমন মৌসুমে ৪-৫ দিনের মধ্যে আগাছা নাশক ব্যবহার করা ভালো।
উপসংহার
১) ড্রাম সিডার দিয়ে ধান চাষে আগাছাই প্রধান সমস্যা হতে পারে। তবে আগাছা খুবই এলাকা কেন্দ্রিক সমস্যা।
২) সাধারণত নিচু জমি এবং এক ফসলি জমিতে আগাছা কম হয়। যে জমিতে আগাছা কম হয় সেখানেই ড্রাম সিডার পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
৩) উন্নত মানের মিশ্রণমুক্ত বীজ ব্যবহার, উত্তম রূপে জমি প্রস্তুত এবং সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা ধানক্ষেত আগাছামুক্ত রাখার সহায়ক। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্রি উইডার ব্যবহার করে বোনা ধানে আগাছা দমন সহজ। প্রয়োজনে আগাছানাশক ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। সময়, মাত্রা এবং পানি ব্যবস্থাপনা এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ
ড্রামসিডার ব্যবহারের ফলাফল
কৃষকের মাঠে
আমন ২০০৪ মৌসুমে এবং বোরো ২০০৪ ও ২০০৫ মৌসুমে দেশের বিভিনড়ব অঞ্চলে কৃষকের মাঠে ড্রাম সিডার দিয়ে সরাসরি বোনা পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ফলন গড়ে প্রায় ১৫% থেকে ২০% বেশি পাওয়া যায় এবং ধান ১০ থেকে ১২ দিন আগে কাটা যায়। ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে আবাদ করলে রোপণের তুলনায় আমন মৌসুমে হেক্টর প্রতি প্রায় ৬,০০০ টাকা এবং বোরো মৌসুমে প্রায় ৮,০০০ টাকা অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
--------
ড্রাম সিডার প্লাস্টিকের তৈরি একটি আধুনিক বপন যন্ত্র। এ যন্ত্রের সাহায্যে কাদা মাটিতে অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি বপন করা যায় ফলে আলাদা করে আর বীজতলা তৈরি করতে হয় না। এটি ধান চাষের একটি বিকল্প ও উন্নত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সারিতে বীজ বোনা যায়। ব্রি ২০০৩ সালে বাংলাদেশে ড্রাম সিডার প্রবর্তন করে। প্রতিটি ড্রামের দৈর্ঘ্য ২৫ সেমি. এবং ব্যাস ৫৫ সেমি. এবং এর দুই প্রান্তে ২০ সেমি. দূরত্বে দুই সারি ছিদ্র আছে। প্রয়োজনে রাবারের তৈরি সংযুক্ত বেল্টের সাহায্যে এক সারি ছিদ্র বন্ধ রাখা যায়। সুস্থ্য বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে পরে ২-৪ দিন (মৌসুমের তাপমাত্রা কম-বেশির ওপর নির্ভরশীল) জাগ দিয়ে ভালোভাবে অঙ্কুরিত করে নিতে হবে। সাধারণত অঙ্কুরের দৈর্ঘ্য ৪-৫ মিমি. অর্থাৎ একটি ধানের সমান লম্বা হলেই ভালো হয়। বোনার সময় হাতলের সাথে ২-৩ ফুট রম্বা চিকন এক খন্ড কলা গাছ বেঁধে নিলে জমিতে পায়ের দাগ বা গর্ত মুছে যাবে এবং বীজের অপচয় রোধ হবে। অঙ্কুরিত বীজ ড্রামে ভরার সময় মনে রাখতে হবে যেন ড্রামের এক তৃতীয়াংশ অবশ্যই খালি থাকে। এতে বিঘা প্রতি ৩.৫-৪ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। বোরো মৌসুমে নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে বীজ বপন করতে হবে। আমন মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ আছে এমন মাঝারী উঁচু জমিতে জুনের শেষার্ধ থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে বীজ বোনা যায়। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, চারা উত্তোলন ও রোপণ করতে হয় না বিধায় সময়, শ্রম ও উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে কমানো সম্ভব। জমি ও পরিবেশ ভেদে আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ প্রযুক্তিতে ধান চাষ করা যাবে, তবে আউশ ও বোরো মৌসুমে এটি বেশি উপযোগী। ড্রাম সিডার দিয়ে চাষ করা বোরো ধানের ফলন রোপা ধানের তুলনায় শতকরা ১০-১২ ভাগ বেশি হয়। যন্ত্রটি হালকা বলে সহজে বহনযোগ্য। একজন লোক ঘন্টায় অন্ততঃ ১ বিঘা জমিতে বীজ বপন করতে পারে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে রোপা পদ্ধতির চেয়ে ১০-১৫ দিন আগে পাকে। ড্রাম সিডার দিয়ে চাষ করতে হলে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হলো, জমিটিকে খুব ভালভাবে সমান (ষবাবষরহম) করে নিতে হবে। এ ছাড়া ড্রাম সিডার দিয়ে ধান চাষ করলে জমিতে অনেক ক্ষেত্রে আগাছার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। তাই জমি প্রস্তুতের সময় ভালভাবে আগাছা দমন করে নিতে হবে।
|