উন্নত চুলা তৈরি করার আগে এর সম্পকেᐂ কিছু জেনে নেব৷ উন্নত চুলার দুটি অংশ ৷ গৌণ ও মূখ্য অংশ৷
• মূখ্য অংশে জ্বালানি দিতে হয়৷ মূল রান্নার কাজ এই গতে॔র মুখেই করতে হয়৷
• গৌণ অংশে মূখ্য চুলা থেকে তাপ আসে৷ এ অংশে হালকা রান্নার কাজ করা হয়৷
আমরা কাজের সুবিধার জন্য কতগুলো পযা॔য়ে ভাগ করতে পারি৷ এই পযা॔য় গুলো হলো ---
পযা॔য়-১
মাটি তৈরি করা
• আমরা ৪ থেকে ৫ ঝুড়ি শুকনা এঁটেল মাটি জোগাড় করব৷
• তারপর মাটিগুলো কোদাল দিয়ে কুপিয়ে নিয়ে ভারি কিছু দিয়ে পিটিয়ে গুঁড়া করব৷
গুঁড়া করা মাটিতে আমরা ৩ থেকে ৪ কেজি তুষের সাথে পরিমাণমতো গোবর ও পানি মিশিয়ে মাটি তৈরি করব৷ এসময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন মাটি বেশি নরম না হয়৷
পযা॔য় -২
জায়গার মাপ ঠিক করা
• আমরা রান্নাঘরে উন্নত চুলা যেখানে তৈরি করব সে জায়গা আগে নিধা॔রন করব৷ চুলার ঘরের উত্তর-পূবᐂ অথবা উত্তর-পশ্চিম কোণে চুলা তৈরি করলে ভালো হয়৷ এতে আমরা পূবᐂ বা পশ্চিম দিকে মুখ করে রান্না করতে পারব৷
• রান্নাঘরের বেড়া থেকে ৬ ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দিতে হবে৷ এরপর আমরা মেঝেতে চারকোণা করে একটি ঘর একে নিব৷ ঘরটি লম্বায় হবে ৩১ ইঞ্চি এবং পাশে হবে ১৭ ইঞ্চি৷
• এরপর আমরা চারকোণা ঘরটিকে দাগ দিয়ে সমান দুইভাগে ভাগ করে নেব৷
পযা॔য় -৩
গতᐂ করা
• দাগ দেওয়া বামদিকের অংশের মাঝখানে আমরা গোল করে একটি দাগ দেব৷ গোল দাগের একদিক থেকে আরেক দিকের দূরত্ব হবে ১০ ইঞ্চি
• আমরা বামদিকের দাগ দেওয়া গোল অংশে একটি ১১ইঞ্চি গভীর গতᐂ তৈরি করতে হবে৷ গতে॔র নিচে একদিক থেকে আরেক দিকের দূরত্ব হবে ঌ ইঞ্চি৷ চিত্রে দেখানো হলো-
• খেয়াল রাখতে হবে যেন, গর্তটি উপর থেকে নিচের দিকে ঢালু হয়৷
পযা॔য় -৪
ভিটি তৈরি
• আমরা যে নরম মাটি তৈরি করেছিলাম তা দিয়ে চারদিকে দাগ দেওয়া জায়গায় একটি ভিটি তৈরি করব৷ খেয়াল রাখতে হবে যেন ভিটি মেঝে থেকে ৬ ইঞ্চি উঁচু হয়৷
• আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন মেঝেতে করা গত॔টি ভিটির সাথে ঠিকমত উপরে উঠে আসে৷ অথাᐂত্ মেঝের গর্তটি যেন ভিটির সাথে ঠিকমত মিশে যায়৷
পযা॔য় -৫
মূখ্য চুলা তৈরি
• এরপর আমরা ভিটির গতᐂটি নিচ থেকে উপর পর্যন্ত মাটি দিয়ে লেপে সমান করে নেব৷
• আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন ভিটির উপর থেকে গর্তটির মোট গভীরতা হবে ১৭ ইঞ্চি৷ অথাᐂত্ মেঝের নিচে ১১ ইঞ্চি এবং মেঝের উপরে ভিটিতে ৬ ইঞ্চি৷
• মূল রান্নার কাজ এ গর্তের মুখেই করতে হয়৷ এ কারনে একে মূখ্য চুলা বলে৷
• মূখ্য চুলার গর্তের গভীরতা বেশি৷ এখানে জ্বালানি দিতে হয়৷
পযা॔য় -৬
গৌণ চুলা তৈরি
• আমরা লম্বার দিক থেকে ভিটিটিকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে মূখ্য চুলার ডানদিকের অংশের মাঝখানে আগের মতো গোল করে একটি দাগ দেব৷ এই গোল দাগের একদিক থেকে আরেক দিকের দূরত্ব হবে ৮ ইঞ্চি৷ এই গোল দাগের মাপে একটি গর্ত তৈরি করুন৷ এই গর্তটিকে গৌণ চুলার কাজে ব্যবহার করা হবে৷
• ভিটির উপর থেকে গর্তটির গভীরতা হবে ৬ ইঞ্চি৷ অথাᐂত্ গর্তটি হবে ভিটির উপর থেকে মেঝে পর্যন্ত৷ এই গর্তের নিচে একদিক থেকে আরেক দিকের দূরত্ব ৭ ইঞ্চি হবে৷
• এ গর্তটির গভীরতা ও গোলের মাপ কম হবে৷ এ গর্তের মূখ্য চুলা থেকে আগুনের তাপ আসে৷ এখানে হালকা রান্নার কাজ করা হয় বলে একে গৌণ চুলা বলে
পযা॔য় -৭
সংযোগ নালা তৈরি
• গৌণ চুলা ও মূখ্য চুলা মাঝখানে ভিটির ২ ইঞ্চি নিচ দিয়ে আমরা একটি গোল নালা তৈরি করে নেব৷ নালাটির গোলের দূরত্ব হবে ৪ ইঞ্চি৷ এই নালা দুই চুলাকে যোগ করে বলে একে সংযোগ নালা বলা হয়৷
• নালা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন নালাটি গৌণ চুলা থেকে মূখ্য চুলার দিকে একটু ঢালু থাকে৷ এতে মূখ্য চুলা থেকে আগুনের তাপ গৌণ চুলায় সহজে যাবে
পযা॔য় -৮
জ্বালানি মুখ তৈরি
• আমরা যেদিকে বসে রান্না করব, মূখ্য চুলার সেদিক দিয়ে জ্বালানি মুখ তৈরি করতে হবে৷
• মূখ্য চুলার মাঝামাঝি ভিটির মাটি কেটে জ্বালানি মুখটি তৈরি করতে হবে৷ মুখটির গোলের দূরত্ব হবে ৫ ইঞ্চি৷
• মুখটি নালার মতো করে ঢালুভাবে মূখ্য চুলার ভিতরে নামিয়ে দিতে হবে
পযা॔য় -ঌ
ধোঁয়া বের হওয়ার পথ তৈরি
• আমরা গৌণ চুলার গর্তের পাশে এককোণে ভিটির উপর থেকে মেঝে বরাবর একটি গর্ত করব৷ গর্তটির গোলের দূরত্ব ৪ ইঞ্চি এবং গভীরতা হবে ৬ ইঞ্চি৷
• গর্তটি গৌণ চুলার সাথে যোগ করার জন্য ভিতর থেকে একটি নালা তৈরি করতে হবে৷ নালাটি ভিটির ২ ইঞ্চি নিচ দিয়ে হবে৷ এই নালার গোলের দূরত্ব হবে ৪ ইঞ্চি৷
পযা॔য় -১০
পাইপ লাগানো
• এবার ৪ ফুট লম্বা একটি পাইপ লাগবে যার ভিতরের গোলের মাপ হবে ৪ ইঞ্চি৷ তারপর আমরা গৌণ চুলার কোণে তৈরি করা গর্তের ভিতর পাইপটি ঢুকিয়ে দেব৷ পাইপটিকে ২ ইঞ্চি পারমাণ ঢুকিয়ে দেব৷ এবার পাইপের অন্য অংশ বেড়ার ভিতর দিয়ে ঘরের বাইরে বের করে দেব৷ ধোঁয়া এই পাইপের মাধ্যমে বাহিরে চলে যাবে৷
• আমরা ঘরের বাইরে বাঁশের খুঁটি পুঁতে পাইপটিকে তার সাথে বেঁধে দেব এবং পাইপের নিচের অংশ মাটি দিয়ে লেপে দেব৷ ফলে পাইপের গোড়া দিয়ে ধোঁয়া বের হতে পারবে না৷
• পাইপের বাইরের মাথায় ফাঁকা জায়গা রেখে একটি বাঁকানো টিনের টুপি লাগিয়ে দিতে হবে যেন পাইপ দিয়ে সহজে ধোঁয়া বের হতে পারে৷ তাছাড়া পাইপের ভিতরে বাতাস ও বৃষ্টির পানি ঢুকতে পারবে না৷
বাঁশের পাইপ তৈরি:
• মোটা বাঁশের গেরোর ভেতরের অংশ ফেলে দিয়ে তার উপর মাটির প্রলেপ দিয়ে পাইপ বানানো সম্ভব৷ বাঁশের উপরে মাটির প্রলেপ দিলে তাতে আগুন ধরবে না৷
• বাঁশের ভেতরে মাটির প্রলেপ দেয়ার জন্য তরল কাদার মধ্যে বাঁশ ডুবিয়ে নিয়ে শুকানো যেতে পারে৷ কয়েক পরতে কাদা লাগানো যেতে পারে৷ কয়েক পরতে কাদা লাগাতে হবে৷ অথাᐂত্ কাদার মধ্যে বাঁশ ডুবিয়ে শুকানোর পর আবার কাদার মধ্যে ডুবিয়ে শুকাতে হবে৷
পযা॔য় -১১
গৌণ চুলার মাটির বাধ তৈরি
• আমাদেরকে গৌণ চুলার ভিতরে একটি মাটির বাধ তৈরি করতে হবে৷ বাধটি ধোঁয়া বের হওয়ার নালা থেকে ২ ইঞ্চি দূরে হবে৷
• মাটির বাধটি ২ ইঞ্চি উঁচু এবং ১ ইঞ্চি চওড়া হবে৷ বাঁধের দুই দিকে চুলার গায়ের সাথে মিলিয়ে দিতে হবে৷ এই বাধে আগুনের শিখা বাধা পায়৷ ফলে ধোঁয়া যাওয়ার পাইপের ভিতরে আগুন যেতে পারে না৷ এজন্য চুলার ভিতরে বেশি করে তাপ পাওয়া যায়৷
আমরা সচেতন থাকলেই নিখুঁত একটি উন্নত চুলা তৈরি করা সম্ভব৷ উন্নত চুলা তৈরির সময় আমাদেরকে যে সকল সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে:
• কখনই টিন বা প্লাস্টিকের পাইপ লাগানো যাবে না৷ এতে আগুন ধরে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ তবে টিনের পাইপের ভেতরে বাইরে মাটি বা সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে কাজ চালানো যেতে পারে৷ সবচেয়ে ভালো হয় মাটির পাইপ হলে৷ নইলে সিমেন্টের তৈরি পাইপ ব্যবহার করতে হবে৷
• চুলার সাথে মাটির পাইপটি খুব সাবধানে যুক্ত করতে হবে৷ যাতে ফুটো থেকে ধোঁয়া বের না হয়৷
• চুলা তৈরির পর ৭-৮ দিন নরম থাকে৷ এসময় চুলার উপর ও আশেপাশে ভারি কোনো কিছু রাখা যাবে না৷
• চুলা তৈরির সময় শিশুদেরকে দূরে রাখতে হবে৷ তাদের হাত-পা লেগে চুলার আকৃতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷
• চুলা তৈরির সময় গৃহপালিত পশু-পাখি দূরে রাখতে হবে৷ যেমন-হাঁস, মুরগি, ছাগল, বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি৷
• চুলা তৈরির পর শুকানো পর্যন্ত প্রতিদিন কাজের পর ঢেকে রাখতে হবে৷
|