লতাপাতা ও গাছগাছলি দিয়ে সবুজ সার তৈরী
সবুজ সার কী? এরকম প্রশ্ন উথাপিতহওয়া স্বাভাবিক।এ প্রশ্নের সহজতর জবাব হচ্ছে-কোনো উদ্ভিদকে সবুজ অবস্থায়চাষ দিয়ে মাটির সাথে মেশানোর ফলে পচে গিয়ে যে সার তৈরী হয়, তাকেই সবুজ সারবলে।অন্য কথায় বলা যায় যে, মাটির জৈব পদার্থের ক্ষয়পূরণ বা বৃদ্ধিরউদ্দেশ্যে একই স্থানে কোনো ফসল জন্মিয়ে সবুজ গাছগুলোকেব মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়াকেসবুজ সার বলে।জমিতে এই পদ্ধতিতে সবুজ সার ব্যবহারের ইতিহাস স্মরণাতীতকালথেকেই চলে আসছে।রোমানগণ সর্বপ্রথম মিশ জাতীয় শস্য সবুজ সার হিসাবে ব্যবহারকরেছেন।
সবুজ সার জাতীয় গাছরপরিচিতি
শুঁটি এবং অশুঁটি উভয় জাতীয় গাছ দ্বারাই সবুজ সার করাযায়।সবুজ সারের উপযোগী প্রায় ৩০টির মতো শুটি এবং ১০টির মতোঅশুঁটি জাতীয় শস্য রয়েছে।আমাদের দেশে সচরাচর শুঁটি জাতীয় গাছই সবুজ সার হিসাবেব্যবহারের জন্য চাষ করা যায়।এগুলোর মধ্যে ধৈঞ্চা, বরবটি, শণই প্রধান।এ ছারাশিম, খেসারি, মাশকলাই, মুগ, মটর, মসুর, ছোলা, সয়াবীন, চীনাবাদাম, অরহর প্রতৃতিও শুটি জাতীয় শস্য।অশুঁটি জাতীয় গাছেরমধ্যে রয়েছে ভুট্টা, ধান, গম, খোয়ার, ইক্ষু, সূর্যমুখী, বাজরা, তুলা, তামাক প্রভৃতি।
কিভাবে সবুজ সার প্রস্তুতকরবেন
বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগী দু্'একটি আদর্শ সবুজ সারজাতীয় ফসালের চাষ ও সবুজ সার প্রস্তুত প্রণারী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করাযাক।
শুঁটি জাতীয় সবুজসার
শুঁটি জাতীয় সবুজ সারের উপযোগী গাছ সারা বছরই চাষ করাযায়, তবেশীতের সময় এর বাড় বাড়তি কম হয়।
ধৈঞ্চা
ধৈঞ্চা বাংলাদেশেরমাটি ও আবহাওয়াতে ভাল জন্মায়।দু-একটি চাষ ও মই দিয়ে ধৈঞ্চার বীজ বৈশাখ/জ্যৈষ্ঠ মাসে ঘনকরে বুনে দিন।বীজ বোনার আগে শিকড়ের শুঁটির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যহেক্টরপ্রতি ২০ কেজি বীজ ঘন করে ছিটিয়ে বুনে তা হালকা চাষ দিয়ে বীজগুলো মাটির নিচেফেলে দিন।কোনো প্রকার যত্ন ছাড়াই দেখবেন দু'মাসের মাধ্যে গাছেফুল দেখা দিয়েছে।তখনই গাছ সবুজহ সার তৈরীর উপযুক্ত হয়েছে ধরেনেবেন।গাছ বেশি লম্বা হয়ে গেলে ২/৩ টুকরা করে কেটে নিয়ে ঐক্ষেত্রে মই দিয়ে গাছ মাটির সাথে মিশিয়ে দিন ক্ষেত্রে সামান্য পানি থাকলে ধৈঞ্চা মইদেয়ার পর খুব সহজে কাদামাটির সাথে মিশে যায়।সাধারণত প্রথম চাষ দেয়ার ১০/১২ দিনের মাথায়পুনরায় চাষ ও মই দিন।দেখবেন মোট ১০/১৫ দিনের মাথায় ধৈঞ্চা গাছ মাটির সাথে মিশেগিয়ে সুবজ সারে পরিণত হয়েছে।ধৈঞ্চা সারের পর রোপা আমন ভালো জন্মায়- তাই ধৈঞ্চা চাষের পররোপা আমনের চাষ করুন।
শণ
শণ একটিউৎকৃষ্টসবুজ জাতীয় সার।ধৈঞ্চার অনুরূপ পদ্ধতিতে হেক্টরপ্রতি ৪০/৫০ কেজি বীজ ঘন করে উঁচু জমিতে বপনকরুন।শণগাছ দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না।তাই ক্ষেতে নালা রাখুন।গাছ ১.২/১.৫ মিটারউঁচু বা ৭/৮ সপ্তাহ পর ফুল দেখা দিলেই ধৈঞ্চার মতো মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়েদিন।১৫দিন পর আবার মই দিয়ে ক্ষেতের পানির সাথে মিশিয়ে দিন।এমনি গাছ পচে যেতেসময় লাগকেব এক মাস।শণ গাছ পচে গিয়ে মাটিতে উৎকৃষ্টমানেরজৈব সার প্রস্তুত করে।
বরবটি
বরবটিও সবুজ সারহিসাবে চাষ করা যায়।যদিও বরবটি মানুষ ও পশুখাদ্য হিসাবেই বেশি চাষ হয় তথাপিচীনে সবুজ সার হিসাবে চাষে এর ফলন বেশি।
বরবটি উঁচু জমির শস্য।পানি দাঁড়ালে ভাল কখনও হয় না।লাল মাটির জন্যখাড়টি অত্যন্ত উপযুক্ত সবুজ সার।অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল বরবটি গাছে মাত্র ছয় সপ্তাহের মাঝেইফুল আসে এবং তখনই তা সবুজ সার হিসাবে ব্যবহারের উপযুক্ত হয়।ঐ সময় চাষ দিয়েমাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে সবুজ সার প্রস্তুত করতে হয়।
|