পাওয়ার ছাড়াই ফ্যান ঘুরবে। দেশের যেসব অঞ্চলে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি কিংবা সোলার প্যানেল নেই, সেখানে এই ফ্যান চালানো যাবে। তাঁর আরো আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে সিডিএমএ রিমোট কন্ট্রোল সার্কিট, আল্ট্রাসনিক মসকিউটো রিপিলেন্ট, আন্ডার অ্যান্ড ওভার ভোল্টেজ কাট অফ। এসব আবিষ্কার মানুষের কাছে পৌঁছলে তারা উপকৃত হবে বলে মনে করেন পল্লব।
যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল রাজীব পল্লব। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার পোড়াদহে। বাবা সাইফুল ইসলাম অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। মা পুষ্প আরা গৃহিণী। পল্লবরা দুই ভাই। ছোটবেলা থেকেই কিছু আবিষ্কারের নেশা জাগে পল্লবের। ২০১০ সালে পলিটেকনিকে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় কোনো রকম পাওয়ার ছাড়াই সিলিং ফ্যান তৈরিতে সফল হন তিনি। যশোর জিলা স্কুলে অনুষ্ঠিত ৩৪তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ২০১৩-তে তাঁর আবিষ্কৃত ফ্যানটি দ্বিতীয় স্থান দখল করে। এই ফ্যান সম্পর্কে পল্লব বলেন, 'কোনো পাওয়ার লাগবে না, সুইচ দিলেই ফ্যান চলবে। ফ্যানের পাশে স্প্রিংয়ের সুইচ তৃতীয় শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ফ্যানের ভেতরে একটি ১২ ভোল্টের ৯ অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি থাকবে। ফ্যানের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাইম মুভার ব্যাটারিটি চার্জ করবে। এক ব্যাটারিতে পাঁচ বছর ফ্যান চলবে। বিদ্যুৎ, সোলার প্যানেল অথবা অন্য কোনো শক্তিরই প্রয়োজন হবে না। যেসব অঞ্চলে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি সেসব অঞ্চলের মানুষ এই ফ্যান ব্যবহার করে উপকৃত হবে।'
আল্ট্রাসনিক মসকিউটো রিপিলেন্ট নামের মশা, মাছি ও পোকা তাড়ানোর এক যন্ত্রও আবিষ্কার করেছেন পল্লব। একটি নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে আল্ট্রাসনিক ওয়েভ উৎপন্ন করে যন্ত্রটি মশা-মাছি তাড়াবে। এমনকি গাছের পোকামাকড়ও এই যন্ত্রের কারণে কাছে ভিড়তে পারবে না। ছোট্ট একটি স্পিকার আর ৯ ভোল্ট পাওয়ার সাপ্লাই দিয়ে তৈরি যন্ত্রটি। এর দাম পড়বে ২০০ টাকা। তাঁর তৈরি আরেকটি যন্ত্রের নাম আন্ডার অ্যান্ড ওভার ভোল্টেজ কাট অফ। খুবই ছোট এই যন্ত্র বিকল্প ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। সুইচ বোর্ড কিংবা মেইন সুইচে যন্ত্রটি লাগিয়ে বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামা রোধ করা সম্ভব হবে। ভেরিয়েবল রেজিস্টার ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। এর দাম পড়বে ৩০০ টাকা। পল্লবের উদ্ভাবিত আরেকটি যন্ত্র হলো জিএসএম অথবা সিডিএমএ রিমোট কন্ট্রোল সার্কিট। এই যন্ত্রের সাহায্যে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে নির্দিষ্ট ফ্যান বা লাইট অন-অফ করা যাবে। পল্লব জানান, প্রতিটি ফ্যান ও লাইটে সার্কিট থাকবে, কোড নম্বর থাকবে। কোড নম্বরের সাহায্যে ফ্যান বা লাইট অন-অফ করা হবে।
এসব যন্ত্র ছাড়াও প্রতিদিন ভিন্ন ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারে পল্লব কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যন্ত্রের সাহায্যে আমাদের জীবনযাত্রা বদলে দিতে পারব আমি। তাতে অনেকেই লাভবান হবে।' যোগাযোগ করা হলে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজির বিভাগীয় প্রধান খন্দকার সুলতান আহমেদ বলেন, 'পল্লবের উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার করে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে তা পুরস্কৃত হয়েছে। উৎসাহ-উদ্দীপনা আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে আরো ভালো করবে। লেখাপড়া শেষ হলে যন্ত্র আবিষ্কারে সময় দিতে পারলে পল্লবের উদ্ভাবনী শক্তি দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশংসা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।'
|