বীরত্ব~~Hedaet Forum~~


Email: Password: Forgot Password?   Sign up
Are you Ads here? conduct: +8801913 364186

Forum Home >>> Blogs, Variety >>> বীরত্ব

Protikkha
New Member
Total Post: 1

From:
Registered: 2012-05-21
 

পৃথিবীর সেই সূচনা লগ্ন থেকে বাহু বলে বলীয়ান আমি। কখনও কেউ আমার উপর চোখ রাঙালে তাকে ও তার রাজ্যের অগণিত লোককে আমার নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় ধ্বংস করে উচিত শিক্ষা দিয়েছি, চিরতরে গোলাম করে রেখেছি। হাজার জনপদ ধ্বংস করে আমি বুঝিয়ে দিয়েছি আমার বীরত্ব কত। যে আমার বশ মেনেছে তাকে আমি পালন করেছি। যে আমার বশ্যতা করে নি তাকে নিশ্চিহ্ন করেছি। আমি যুগে যুগে এসেছি ধ্বংস, শোষণ, নির্যাতন ও দুঃশাসন নিয়ে এই ধরা মাঝে দুর্বলও ন্যায়পরায়নদের উপর যমদূত হয়ে। বুঝিয়ে দিয়েছি আমি কত নিষ্ঠুর, আমি কী রকম শাসক, শোষক। বড় শাসক হবার ইচ্ছায়, বেশি রাজ্যের রাজত্ব লাভের লোভে হাজার মানুষের রুধির ধারায় প্রান্তর রাঙিয়ে দিয়েছি আঙ্গুলের ইশারায়। রক্ত চক্ষুর নিষ্ঠুর চাহনীর মাধ্যমে জগতকে দেখিয়ে দিয়েছি আমার হৃদয় কত নিষ্ঠুর, কত পাষাণ। জ্ঞান নয়, শীতল বুদ্ধি দিয়ে নয়, আপোষে নয়, সুন্দর সুবচন দিয়ে বুঝিয়ে নয়, আমার দুর্দমনীয় দানবাকৃতির মন দিয়ে সব কেড়ে নিয়েছি। চেয়েছি রক্তের স্রোত বয়ে যাক তবু চাই আমার প্রভূত্ব বিস্তার। জানোয়ার দেখে ভয় পাক আর না পাক আমাকে দেখে ভয়ে মানুষ চমকে উঠুক, এটাই আমার বাসনা, ক্ষমতার প্রতাপ। আমি জানি না মানুষকে কীরূপে বুকে টেনে নিতে হয়, কীভাবে মমতা বৃক্ষের ছায়াতলে আশ্রয় দিতে হয়, দেবতাকে কীভাবে পূজা দিতে হয়, খোদার দরবারে মস্তক নত করতে হয়। জানি দরবার আমার একটাই যা অহংকার আর দেমাকের অলংকারে অলংকৃত। আদেশ আমার সর্ব শিরধার্য। নতুবা শিরোচ্ছেদ। অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছি দম্ভভরে আমাকে বহাল রাখার জন্যে। যুগে যুগে যারা জ্ঞান গরিমা দ্বারা মাথা উঁচু করে আমার উপর দাঁড়াতে চেয়েছে তাদের কঠিন, নির্মম হাতে স্তব্ধ করে দিয়েছি। কোথায় সক্রেটিস, কোথায় আর্কিমিডিস, ঈসা পয়গম্বর, বড় বড় জ্ঞানের হাজারো দাবীদার?
তাদের সরিয়ে দিয়েছি দূর দূরান্তে। সকালের সোনালী সূর্যের আলো সব ঘরে পৌঁছাতে দিই নি। আঁধার করে রেখেছি শাসনাঞ্চল। নিজেকে সেই অন্ধকার মাঝে জোর করে আলোরূপে প্রচার করেছি। পথের মাঝে যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে তাকে ধূলিতে মিশিয়ে দিয়েছি। আমাকেই আমি রেখেছি বজায়। মনে করেছি এ বিশ্ব আমার, রাজত্ব আমার। শান্তি আমার শশ্মান বানাতে, তাজমহল বানাতে নয়।
যুগে যুগে আমি আবির্ভূত হয়েছি ফেরাউন, আলেকজান্ডার, এজিদ, শিমার, চেঙ্গিস, হিটলার, বুশসহ বহু নামে। তাই আমি বহুনামী। আমি সেই ধ্বংস যজ্ঞ থেকে এখনো মানুষের মনে উদিত হই নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে। শিউরে ওঠে আমাকে চেনা জানা লোকের শিরা উপশিরা। আমার বর্ণনা দিতে হয় না আমাকে। আমি বিশ্বাস ঘাতক, আমি নিষ্ঠুর, আমি দানব, হিংস্র পশুবৎ আমি। তার পরও মানুষ আমায় স্মরণ করে আমার কর্মের মাঝে, আমার অনুসারীর মাঝে। হায়! আমার স্মরণকারী। একটা মহা ধন্যবাদ তোমায়। আজো রেখেছ বাঁচিয়ে আমায়!
মমতা কারে বলে সে আমি জানি না, আমি চিনি ভোগ; প্রেম কী জিনিস তা চিনি না। কষ্ট দিয়ে আমি সুখ পাই, ভোগে পাই পরম পুলক। তাই তো রাজ্য জুড়ে বানাই রঙমহল। হাতের কাছে রাখি শরাবপূর্ণ পিয়ালা, রাখি নয়ন জুড়ানো মন মাতানো রক্ষিতা। জলসা ভরি সুখের নৃত্যানুষ্ঠান দিয়ে, রমণীদের সুখের যাদু মাখা ছোঁয়াতে। আমি সুরাপানে নয়নে দেখি রঙিন দুনিয়া, মনে পাই নেশার দোলা। পৃথিবীকে চাই আমি আমার সুখের রঙমহল করে, আমার হুকুমের তাবেদার রূপে।
আমি ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন সহ বিশ্বযুদ্ধ সমূহে নিরাপরাধ শিশু, মা, ভাই ও বোনের রক্তের সাগরে গোসল করেছি। নির্যাতিত মানুষের কষ্ট ঝরা অশ্রু দিয়ে সাগর বানিয়েছি।
আজ পৃথিবীর সবাই আমাকে ধিক্কার দেয়, হিংস্র বলে, খুনি, নিষ্ঠুর বলে গালি দেয়। হায় আমার রাজত্ব! হায় আমার বাহাদুরী, অসির ঝনঝনানি, কোথায় সিংহাসন? যে মসি ভাঙতে চেয়েছি তাই আজ মানুষকে আলো দেখাচ্ছে। তবে কি আমি আঁধারেই রয়ে গেলাম? আমার কি পরাজয় হল? আমার বিজয় পতাকা কি ছিন্ন হল?
হ্যাঁ, আমার বিজয় পতাকা ছিন্ন হল। আমার পরাজয় হল। আমার দম্ভ, অহংকার, হিংসা সব ধূলোয় মিশে গেল। আমি ন্যায়ের চোখে অন্যায়, আইনের চোখে অপরাধী, মমতার কাছে নির্মম, দয়ার কাছে নির্দয় হয়ে রইলাম।
আমি ভুলে গিয়েছি মানুষকে তাই ভুলেছি মানবতা, ভুলে গিয়েছি ভালবাসা, প্রেম। নিপীড়িতের দ্বারে দাঁড়াই নি দেবতা হয়ে। অসুর হয়ে শুধু পরিচয় দিয়েছি। মানুষের পেটে জন্ম নিয়ে মানুষকে বুঝি নি। মানুষের মন মানুষরূপে জয় করার চেষ্টা করি নি। মানুষ তাই আমাকে মানুষরূপে স্মরণ করে না। তার হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা উজাড় করে আমার কাছে ছুটে আসে না, আমাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে না। করবে কীরূপে?
আমার মাঝে যে দুটি রূপ আছে, আমি যে তার এটিকে দেখেছি, অন্যটি নয়। আমি তো সেই একটি রূপ নিয়েই মানুষের কাছে পরিচিত। অন্যরূপ যদি দেখতাম, অন্যরূপে যদি পরিচয় দিতাম তবে মানুষ আমাকে মানুষরূপে চিনত, জানত। মানুষরূপে মূল্যায়ন করত। হায়! আমার বীরত্ব আমায় কী দিল? মানুষের মনের ভালবাসা জড়িত, কোমল অনুভূতি জড়িত সিংহাসন দিল না। দিল ঘৃণায় ভরা, অভিশাপে ভরা এক কুৎসীৎ চেয়ার।
আজ বুঝেছি বীরত্ব আমার নয়, তার; যে নিজের মাঝে আমার এ বীরত্বকে পরাজিত করতে পেরেছে, ধ্বংস করতে পেরেছে। যে ভাঙা কুটিরে জন্ম নিয়ে বিজ্ঞানী হয়ে হাজার বছর ধরে জগতের কল্যাণ করছে, ডাক্তার হয়ে ঘরে ঘরে আর্তের সেবা করছে, ঔষধ তৈরি করে হাজার হাজার রোগ ভালো করে সকলের কল্যাণ সাধন করছে। হায়! আমার হাতে একটা ঔষধ ও তৈরি হল না, একটা বৈদ্যুতিক বাল্ব ও না। কেমনেই বা হবে আমি যে মানব সুরের মাঝে অসুর সৃষ্টি করেছি। আমি যে কল্যাণ সাধনায় নয়, নতুন কিছু সৃষ্টির সাধনায় নয়, আমি যে ধ্বংসের নেশায় পাগল ছিলাম।
সেই ঔধত্য রক্তের স্রোত ধারা আজো আমার মাঝে প্রবাহিত হয়। আমাকে উত্তেজিত করে তোলে। আমি সব শিক্ষা ভুলে যাই। এখনও একটু স্বার্থের জন্য, একটু রাগে, নিজের তেজে, নিজের খেয়ালে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ক্ষেপণাস্ত্র, মারণাস্ত্র, এটোম বোমা প্রভৃতি রূপে আঘাত হানি। কল্যাণের নামে, নিরাপত্তার নামে হাজার হাজার ঘরে বয়ে আনি অকল্যাণ। রক্ষার নামে করি ধ্বংস। জ্বালিয়ে চলি হিংসা প্রতিহিংসার অনির্বাণ শিখা। আমার একটি বসত-দেহের মৃত্যু হয়, আমি অন্য আরেকটি দেহ-মনে জন্ম নিই। এভাবে চলে আমার জন্ম চক্র। পৃথিবীর যেন মুক্তি হয় না এ দানবের হাত থেকে। মানবের ঘরে ঘরে এ দানবের জন্ম আর কত কাল হবে? আমাকে সবাই শান্ত কর। সকলের শান্তির জন্য।




H M SIRAJ
Editor of Alapawn
alapawn@ymail.com
01742270602
Chittagong.
Bangladesh.


 

murad

VIP Member

Total Post: 155
From
Registered: 2012-04-14
 

Thanks you Mr.Protikkha from www.hedaet.com